জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে গত শুক্রবার ঢাকায় এসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিমানবন্দরে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোদিকে লালগালিচা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনার দেয়া হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আসার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে একটি ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘ঢাকার জন্য রওনা হলাম। এই ভ্রমণ বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব আরও গভীরতর করবে।’ আবার ঢাকায় পৌঁছেই বাংলায় টুইট করেছেন তিনি। টুইটে তিনি বলেন, ‘ঢাকা পৌঁছলাম। বিমানবন্দরে বিশেষ অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। এই সফর আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।’ এ থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর বিশেষ আবেগপূর্ণ ইতিবাচক মনোভাব। ভারতের প্রধানমন্ত্রী চলতি সফরে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য উপহার হিসেবে ১২ লাখ ডোজ করোনার টিকা নিয়ে এসেছেন। আর এই সফরে তিনি পরিধান করবেন জাতির ঐতিহ্যবাহী পোশাক মুজিব কোট। বাংলাদেশ ভারতের শুধু নিকট প্রতিবেশীই নয় বরং দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, অকৃত্রিম বন্ধু ও সুহৃদ। দিল্লী বাংলাদেশের কাছে করিডর, ট্রান্সশিপমেন্ট, শুল্কমুক্ত পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্য সুবিধাসহ যখন যা চেয়েছে তখন তা-ই পেয়েছে। ১৯৭১-এর মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ভারতের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও সহযোগিতা সর্বদাই স্মরণ করা হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রথম দিকে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। তবে শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সফর বাতিল করায় তা আর হয়ে ওঠেনি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আদৌ আগ্রহী নন। তারপরও সম্ভাবনা রয়েছে ‘গুজরাল ডকট্রিনের’ মতো প্রয়োজনে পশ্চিমবঙ্গকে পাশ কাটিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা চুক্তি সম্পাদন করতেও পারে। দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা শুধু নয়, সীমান্ত সুরক্ষা, প্রযুক্তি বিনিময়, মহাকাশ গবেষণা, সাইবার নিরাপত্তা, কানেক্টিভিটি, শিপিং, নদী খননসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতার দিগন্ত ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। ১৯৬৫ সালের আগের রেলওয়ে লিংক পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। নতুন সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। সড়কপথে বাণিজ্যকে আরও সুবিধা দেয়ার চেষ্টা চলছে। বঙ্গবন্ধু দুই দেশের সম্পর্ক ও জোরালো অংশীদারির যে ভিত্তি গড়েছিলেন সে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ-ভারত; দুই দেশই আগ্রহী। মোদির সফরে দুই পক্ষ বেশ কিছু চুক্তি, সমঝোতা বা ব্যবস্থায় সই করবে। এগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ট্রেড, ওশানোগ্রাফি, সংস্কৃতি খাতে সহযোগিতা, ১৯৭১ সালের চেতনা সংরক্ষণ, স্বাস্থ্য, রেলওয়ে, শিক্ষা, সীমান্ত উন্নয়ন ও বিদ্যুত খাতে সহযোগিতা। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন মুজিববর্ষ, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীর এই বছর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এগুলোর উদযাপন হবে বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল জাদুঘর জাতিসংঘসহ সারাবিশ্বে দেখানো হবে। বাংলাদেশের মানুষ আশা করে, বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও উন্নত ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সফর একটি মাইলফলক হয়ে উঠবে।
Leave a Reply